https://www.somoyerdarpan.com/
2590
sylhet
প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২৪ ১৪:১০
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের মতো সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে এসব শিক্ষক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্ষোভ-বিদ্বেষ থেকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত রোববার ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের গাছতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা বালা তালুকদার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক দীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে জড়ো হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবির ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ ফারুক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়টি অবগত করে। পরে মাহবুবুল কবির ও জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ ফারুক শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেন। ইউএনও তখন ১০ মিনিট সময় চাইলে অফিস কক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে সুমিতা বালা তালুকদার ও দীনুল ইসলাম সবার উপস্থিতিতে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন।
পরে বেলা ৩টার দিকে পদত্যাগ করা দুই শিক্ষক ইউএনও কার্যালয়ে এসে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেন। তখন শিক্ষকেরা বিষয়টি বিবেচনা ও যাচাই-বাছাই করার জন্য ইউএনওর কাছে সময় প্রার্থনা করেন। পরে ইউএনও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুর রহমানকে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে না যাওয়ার নির্দেশ দেন।
গত মঙ্গলবার জেলার জগন্নাথপুরে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেছে, এই প্রধান শিক্ষক চার তারিখের আগে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
এর আগে গত রোববার মধ্যনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের পদত্যাগের পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চাপে পদত্যাগ করেন ওই বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শরীফ উদ্দীন। এ ছাড়া অপর এক শিক্ষক শামীম আহমেদকে দুই মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।
গত মঙ্গলবার জেলার দোয়ারাবাজারে লিয়াকতগঞ্জ স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদিরের অপসারণসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। গত বৃহস্পতিবার জেলার ছাতক সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তুলসি চরণ দাসের পদত্যাগের দাবিতেও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দেশব্যাপী শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা ও হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সুনামগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে শহরের হোসেন বখত চত্বরে এই কর্মসূচি হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী নাহাত হাসান পৌলমী বলেন, সারাদেশে পদত্যাগের নাম করে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সার্থকতা থাকবে না। শিক্ষক সমাজকে কেউ মান্য না করলে, শ্রদ্ধা না করলে কখনোই রাষ্ট্র সংস্কার করা সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থী ইমনদ্দোজা ইমন বলেন, কোনো শিক্ষক যদি স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হয়ে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী তাঁর শাস্তি হবে। তবে তাদের কোনোভাবেই হেনস্থা করতে পারি না। শিক্ষাগুরুর মর্যাদা দিতে হবে। সেটি ভুলে গেলে হবে না।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়েই পরিচালনা কমিটি আছে। কোনো শিক্ষক অনৈতিক কাজে যুক্ত হলে, কমিটি বরাবরে অভিযোগ করা যেতে পারে। এখানে সুরাহা না হলে জেলা প্রশাসক বা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভাগ হয়ে অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে যাবে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বললেন, কোনো শিক্ষকের রাজনৈতিক মত থাকতেই পারে। তিনি কোনো অনিয়ম করে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আইন নিজের হাতে নেওয়ার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না কলেজ-মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বললেন, কোনো শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। কাউকে বাধ্য করে পদত্যাগ করিয়ে পদত্যাগপত্র তাদের কাছে পাঠালে এবং পরে ভুক্তভোগী শিক্ষক এসে তাদের কাছে লিখিত দিলে সেটি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন না।