https://www.somoyerdarpan.com/

3519

bangladesh

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, ২০ স্থাপনা নদীতে

প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২৫ ১২:২৩

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, ২০ স্থাপনা নদীতে

 

শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি। আর এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

অতিদ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সোমবার বিকাল থেকে প্রকল্প রক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১০টি বসতবাড়ি ও ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরও প্রায় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই স্থানে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা।
 

গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝির ঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে।

এছাড়া আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল তা দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করা হয়।

এদিকে গত ঈদের দিন ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ২০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে সেই শঙ্কা কাটতে না কাটতে সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয় রক্ষা বাঁধে। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১০টি বসতবাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরও ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিান। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধের দাবি স্থানীয়দের।

বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহল বলছেন, বারবার মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও পরিকল্পনার অভাব ও দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে পদ্মা পাড়ে কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্যই ছিল নদীভাঙন রোধ। অথচ এখন সেই বাঁধই যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

মাঝির ঘাট এলাকার হাসান মিয়া বলেন, দুপুরে নদীর অবস্থা স্বাভাবিক দেখেছি। বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকালে মাইকে শুনি নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বিকালে নদীর পাড়ে এসে দেখি চোখের সামনে বেড়িবাঁধসহ বেশকিছু বাড়িঘর নদীতে চলে যায়। এখন আমরা কোথায় যাব।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ মাঝি বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিতে পারেন নাই। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ৯টি বসত বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একটি বিল্ডিং নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকে ঘর-বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। এ ভাঙন কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমরা জানি না। লোকজন বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা চরম আতঙ্কের ভেতরে আছি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “হঠাৎ ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। বাঁধের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে।”

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে, তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের অবস্থা খুব ভয়াবহ। বেশকিছু ঘরবাড়ি নদীতে চলে গিয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।