https://www.somoyerdarpan.com/

2206

international

আট বছর পর হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকা থেকে বাদ দিল আরব লিগ

প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৫:৫৯

আট বছর পর হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকা থেকে বাদ দিল আরব লিগ

পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তি হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক ক্ষমতার সমীকরণে এক অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অধিকারী। হিজবুল্লাহ একটি আরব শক্তি হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোনো আরব সরকার হিজবুল্লাহ বিরোধী অবস্থান নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে ২০১৬ সালে আরব লিগ লেবাননের হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকাভুক্ত করে।

২০১৬ সালের ১১ মার্চ আরব লিগ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকাভুক্ত করে বলেছিল এই দলটি যেন তাদের ভাষায় 'উগ্রবাদ ও ফের্কাবাজি বন্ধ করে এবং দেশগুলোর ঘরোয়া বিষয়েও বন্ধ করে হস্তক্ষেপ'। আরব লিগ ওই বিবৃতিতে এ অঞ্চলে তার ভাষায় কথিত সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসীদের প্রতি সহায়তাও বন্ধ করতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম প্রতীক হিসেবে খ্যাত হিজবুল্লাহর প্রতি দাবি জানিয়েছিল।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে পর পর দুটি বড় যুদ্ধে ও দীর্ঘ সংগ্রামে অসাধারণ সাফল্য অর্জনকারী লেবাননের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ আরব লিগের পক্ষ থেকে তখনই নেয়া হয় যখন ওই পদক্ষেপের কিছু আগে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলো ২০১৬ সালে দোসরা মার্চ লেবাননের হিজবুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করে। হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দল বলে অপবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে আরব লিগের উৎসাহিত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ ছিল ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কে উত্তেজনা।

যাই হোক্‌ ওই ঘটনার আট বছর পর এখন আরব লিগ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দলের তালিকা  থেকে বাদ দিয়েছে। গত ২৯ জুন আরব লিগের মহাসচিবের সহকারী হিসাম জাকি এ ঘোষণা দেন যে আরব লিগ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দল বলে উল্লেখ করবে না। সম্প্রতি লেবাননের রাজধানী বৈরুত সফরের একদিন পর তিনি এই ঘোষণা দেন। সংবাদ মাধ্যম আলক্বাহের টেলিভিশন জানিয়েছে, এই টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে হিসাম বলেছেন, অতীতে আরব দেশগুলার জোট আরব লিগের নানা সিদ্ধান্তে হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে এই জোটের সদস্য দেশগুলোর কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এখন এই দেশগুলো হিজবুল্লাহর ব্যাপারে এই লেবেল ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তাই এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বা যোগাযোগের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

গত শুক্রবার জনাব জাকি বৈরুতে হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মুহাম্মাদ রাআদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এটা ছিল হিজবুল্লাহর সঙ্গে আরব লিগের প্রথম যোগাযোগ বা সাক্ষাৎ।  হিজবুল্লাহর ব্যাপারে আরব লিগের এই সিদ্ধান্তে যেসব ঘটনার প্রভাব রয়েছে সেসবের মধ্যে ইসলামী ইরানের সঙ্গে কোনো কোনো আরব দেশের বিশেষ করে সৌদি আরবের সম্পর্কে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের বিষয়টি প্রথমেই উল্লেখযোগ্য।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় যে বড় ঘটনার প্রভাব লক্ষণীয় তা হল ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর আল-আকসা তুফান নামক অভিযান। ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষায় বড় ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছে হিজবুল্লাহ। ৭ অক্টোবরের ওই ঘটনার পর গত ৮ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন আল-আকসা তুফানের পর এ অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেছে এবং গাজার জনগণের প্রতি লেবাননের এই আন্দোলনের সমর্থনের কারণে আরব জনগণের মধ্যে হিজবুল্লাহর জনপ্রিয়তা ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের উত্তর সীমান্তে ইসরাইলকে ব্যস্ত না রাখলে ইসরাইল গাজার ওপর আরও বেশি শক্তি ও বলদর্পিতা প্রয়োগের সুযোগ পেত।