https://www.somoyerdarpan.com/

1531

bangladesh

তীব্র দূষণের কবলে বুড়িগঙ্গা নদী: নদীরক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৩

বিষে ভরে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি। দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে অস্তিত্ব মিলছে ভারি ধাতুর। যার প্রভাবে কমে গেছে নদীতে অক্সিজেনের মাত্রাও। মৃতপ্রায় নদীটির পানি ল্যাবে পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক, ভারি ধাতু, লেড, ক্রোমিয়ামের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, লাইফ সাপোর্টে থাকলেও ফুরিয়ে যায়নি মৃতপ্রায় নদীটির বেঁচে থাকার আশা। শক্ত হাতে দেখভাল করলে আবারও প্রাণ পেতে পারে বুড়িগঙ্গা।

ল্যাব টেস্টে মিলেছে বুড়িগঙ্গার ভয়াবহ চিত্র। প্রতি লিটার পানিতে মিলছে ৫ থেকে ৪৫ পিছ মাইক্রো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব। পানিতে আর্সেনিকের আদর্শ মাত্রা ১০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে হলেও বুড়িগঙ্গায় মিলেছে ৫৮ থেকে ৯৮.৪৪ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। এর চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতিকর লেড ১০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে আদর্শ হলেও এখানে মিলেছে ৫০.১২ থেকে ৬৬.৫৪ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। ক্রোমিয়াম আদর্শ মাত্রা ৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে হলেও এখানে মিলেছে ৭০.১৫ থেকে ১২০.৮৬ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। তাছাড়াও ক্যাডমিয়াম আদর্শ মাত্রা ৩ মিলিগ্রাম হলেও বুড়িগঙ্গায় মিলেছে ৮.০২ থেকে ১১.৮৯ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার।

এসব দূষিত পদার্থের উপস্থিতির কারণে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে হলেও এখন তা নেমেছে ০.২ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। তাই এ পানিতে প্রাণের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন।

সেখানকার একজন বাসিন্দা জানান,

“১৯৯৮ সালের পর থেকে বুড়িগঙ্গার পানি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অতীতে পানি পিপাসা পেলেই নদীর পানি খেতে পেরেছি। কিন্তু এখন সেটা মোটেও সম্ভব নয়”।

অপর একজন মহিলা জানান,

“অতীতে আমরা নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে আসতাম। এই নদীকে গোসল হতে শুরু করে এর পানিও পান করতাম। এখন বিভিন্ন দিক থেকে বর্জ্য এসে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত করছে। কিন্তু এসব ময়লা-আবর্জনা যেন নদীতে না ফেলা হয়, সেই ব্যবস্থা করা উচিত”।

বুড়িগঙ্গার এমন অবস্থা দেখে নদী গবেষক মীর মোহাম্মদ খান বলেন,

“বুড়িগঙ্গার পানিকে আমি অবশ্যই বিষাক্ত বলবো। সেটা তো স্বাভাবিকভাবে দেখলেই বুঝা যায়। আর এই নদীতে মাছ থাকলেও সেটা খেলে মানবদেহে বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দিত”।

এ বিষয়ে পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন,

“ঢাকা সিটি করপোরেশনগুলো, ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সেজন্য একযোগে কাজ করতে হবে। অনুমোদন নেয়া কারখানাগুলো যেন তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করে পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করে। এগুলো নিশ্চিত করলে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত হবে বলে আশা করা যায়”।

নদী রক্ষায় পরিবেশবিদদের ধারণা,ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা তদারকি সংস্থা কেউই বুড়িগঙ্গার এমন পরিণতির জন্য দায় এড়াতে পারবে না। তবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দিয়ে লাইফসাপোর্ট থেকে এ নদীকে বাঁচিয়ে তোলার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।