https://www.somoyerdarpan.com/
1417
sylhet
প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৪
সিলেট মহানগরীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধিতে ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে সবখানেই মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। এতে দিনে-রাতে সমানতালে মশা কামড়াচ্ছে। ঘরে বাইরে কোথাও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর খোলা যায়গায় এক মিনিটও দাড়াঁনোর উপায় নেই। এমনকি যেকোনো খোলা জায়গায় দাঁড়ালেই মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে উড়তে থাকে মশা।
মশা নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের। আগের বছরেও বরাদ্দ ছিল প্রায় সমপরিমাণ। এতো কিছুর পরও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থ সিটি করপোরেশন। কোনোভাবেই মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা জানায়, গেল বছরের নভেম্বরে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে ফের ওষুধ ছিটানোর কথা রয়েছে।এমনকি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে সারা বছর মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে মশাবাহিত রোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন সামনে বর্ষা মৌসুমে মশার উৎপাত আরও বাড়বে। মশা নিধনে এখন থেকেই সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। নতুবা মশার কামড়ে আক্রান্তদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা জটিল রোগে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
নগরীর বেশকিছু এলাকা ঘুরে জানা যায়, মহানগরীর প্রায় সব এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে মশা নেই। নগরীর বেশির ভাগ এলাকায়ই ডোবা, নালা ও নির্মাণাধীন ভবনের রিজার্ভারে দলবেঁধে মশা উড়তে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তুপে মশার বংশ বৃদ্ধির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষকরে নগরীর বর্ধিত অংশের প্রায় সব ওয়ার্ডেই মশার উৎপাত বেশি দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানায়, সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময় শোনা গেলেও বাস্তবে কর্মীদের দেখা মেলে না। অনেকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বাসা-বাড়ির জানালা ও বারান্দায় নেট লাগিয়েছেন।
সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা মিজান আহমদ বলেন, “মশার নির্যাতনে অতিষ্ঠ। দিনের আলোয় মশা কিছুটা কম দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়তে দেখা যায়। মশাগুলো সাইজে খুব বড়। শরীরে বসে কিছু বুজে উঠার আগেই কামড় দিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যায় খোলা যায়গা দাঁড়ানোই যাচ্ছে না।”
কলেজ ছাত্রী ফারিহা তাবাসসুম বলেন,“সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় পড়ার টেবিলে বসা যাচ্ছে না। কয়েল ওষুধ কিছুতেই মশা তাড়ানো যাচ্ছে না।”
বেসরকারি ইন্সুইরেন্স কোম্পানীতে চাকরিরত জহিরুল ইসলাম জানান,“ কর্মস্থল থেকে শুরু করে বাসা সর্বত্র মশার উপদ্রব বেড়েছে। যেন অস্থির অবস্থা। মশারি, কয়েল কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।”
সিসিকের কর্মকর্তাদের মতে নগরবাসীর সচেতনতা অভাব মশার উপদ্রব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা বলছেন,“ বাসাবাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি-ফ্রিজ থেকে জমা পানিতে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে বেশি। ওই সব স্থানে মশক কর্মীরা যেতে পারে না। কর্মীরা নিয়মিত ও সঠিকভাবে মশক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। এতে নগরবাসী সচেতন হলে মশা নিধন আরও অনেক সহজ হবে।”
সিসিকের স্বাস্থ্যশাখার তথ্যমতে, মশার ওষুধ ছিটানোর প্রায় ২৫০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে আছে হস্তচালিত স্প্রেয়ার ও ফগার মেশিন। কিন্তু অর্ধেক মেশিনই নষ্ট। তথ্যঅনুযায়ী হস্তচালিত স্প্রেয়ার মেশিন আছে ২৩০টি। এরমধ্যে নষ্ট ১৫০টি মেশিন। আর ফগার মেশিন সচল আছে মাত্র ১৪টি। তবে মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে আরও ৮০টি ফগার মেশিন কেনার কথা জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদ হোসেন।
তিনি বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন-১) তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। ২) উপরন্তু পর্যাপ্ত সরঞ্জামও নেই এবং ৩) মশক নিধনে আমরা যে মেশিনগুলো ব্যবহার করছি সেগুলো খুবই নিম্নমানের।
তবে তিনি এ সমস্যা থেকে উত্তরণে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন।তিনি বলেন, আগে প্রতি তিনমাস পরপর ওষুধ ছিটানো হতো। আবার বর্ষা মৌসুমে অভিযান চালানো হতো। এখন আমরা এ শাখায় স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দেব।এ মাসের ১৫ তারিখ থেকে প্রতিদিনই সব ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো ও অভিযান পরিচালনা করা হবে। একইসাথে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে এখন থেকে সারা বছর মশক নিধনে নানা কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে এখন থেকে সারা বছর মশক নিধনে নানা কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করার পরিকল্পনা নিয়েছি।