অতিরিক্ত গ্যাসের ওষুধ খেলে হতে পারে যেসকল শারীরিক সমস্যা-

অ্যাসিডিটির সমস্যায় গ্যাসের ওষুধ—এটা প্রায় সবাই নিজ দায়িত্বেই খেয়ে ফেলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেসব ওষুধ গ্রহণ করা যায়, এগুলোকে বলা হয় ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ। গ্যাসের ওষুধও রয়েছে এ তালিকায়। কিন্তু অনেকেই এর দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা প্রায়ই বিবেচনায় আনেনই না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মতলেবুর রহমান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন,“ বাংলাদেশে এমন বহু রোগী রয়েছেন, যাঁরা আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।কিন্তু এসব রোগীদের মধ্যে আবার অনেকেরই দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ সেবন করার ইতিহাস আছে। তাঁদের আয়রনের অভাব হওয়ার কিন্তু অন্য কোনো কারণ নাও থাকতে পারে। তাঁদের এই রক্তশূন্যতার জন্য মূলত গ্যাসের ওষুধই দায়ী। শুধু রক্তশূন্যতাই নয়, দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ সেবনের কারণে অনেক সময় হজমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।”

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসমূহ-

পাকস্থলীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্যই সেখানে কিছুটা অ্যাসিডিক, অর্থাৎ অম্লীয় পরিবেশের প্রয়োজন হয়।কিন্তু অম্লতা বেড়ে গেলে আমরা গ্যাসের ওষুধ সেবন করে থাকি যার কাজই হলো অম্লতা কমানো।

১) দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ খেলে পাকস্থলির স্বাভাবিক অম্লীয় পরিবেশটাই হারিয়ে যায়। এতে পাকস্থলীর কাজে ব্যাঘাত ঘটে ও হজমে সমস্যা দেখা দেয়।

২) এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ খেলে পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যার কারণেও হজমের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

৩) আর খাবার থেকে আয়রন শোষণের জন্যও অম্লীয় পরিবেশের বিকল্প আমাদের দেহে বিকল্প নেই। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সত্ত্বেও আপনার আয়রনের অভাব হতে পারে, যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনি গ্যাসের ওষুধ খান।

৪ )দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাসের ওষুধ খেলে লিভার, কিডনি ও বোনম্যারোর (অস্থিমজ্জা) ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ও

৫) সিরাপ–জাতীয় গ্যাসের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে সেটির মধ্যকার রাসায়নিক উপকরণের কারণে অনেকক্ষেত্রে শরীরে এর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।

তাই কোনো অবস্থাতেই দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো গ্যাসের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কিছুদিন বিরতি দিয়েও যদি প্রায়ই গ্যাসের ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলেও দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বরং বারবার গ্যাসের ওষুধের প্রয়োজন হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এতে চিকিৎসক আপনার সমস্যার মূল কারণটি খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।