https://www.somoyerdarpan.com/
3271
politics
প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫৪
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ভোটের ন্যূনতম বয়স ১৭ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) আয়োজিত এক নির্বাচন সংলাপে প্রদর্শিত ভিডিও বার্তায় তিনি এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের (তরুনরা) নিজস্ব ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মতামত দেওয়ার জন্য, আমি মনে করি তাদের ভোটের বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত।’ বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের ভোটার করার জন্য বিভিন্ন বয়সসীমা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচন সংস্কার কমিশন অবশ্যই এ ব্যাপারে সুপারিশ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি হয়তো এই বয়সটি বেছে নিতে পারি, আবার নাও পারি। ধরুন, আমি তরুণদের দ্রুত ভোটার করার পক্ষে। তারা যত কম বয়সী হবে, পরিবর্তনে তত বেশি আগ্রহী হবে—এটাই আমার যুক্তি।’ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তরুণদের গভীর সম্পর্ক তাদের এই শক্তি প্রদান করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তরুনদের সংখ্যা বিশাল, তারা দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমি জানি না। কিন্তু কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত বয়সটি যদি দেশের বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করে, তাহলে আমিও ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য তা মেনে নেব।’
সরকার দেশের জন্য ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনগুলো জানুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে বলে তিনি জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সকল কমিশন আমাদের কাছে অনেক সুপারিশ পেশ করবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, কারো মত যাই হোক না কেন, আমরা দ্রুত ঐকমত্য স্থাপন করে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকার এমন ব্যবস্থা করতে চায় যাতে আমরা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে পারি।’
প্রফেসর ইউনূস সকল নাগরিক, রাজনৈতিক দল, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসাহের সঙ্গে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একইসঙ্গে চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনের আয়োজন করা। নাগরিকদের এই প্রক্রিয়ায় সময় ব্যয় করতে হবে না যতক্ষণ না তারা নির্বাচনের সময়সূচী পায়, তবে তাদের অবশ্যই সংস্কারের কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ভোটার তারা সংস্কারে অংশগ্রহণ করবে, এবং যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবে তাদেরও সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ অংশগ্রহণ করা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে জাতির কাছে একটি সুপারিশ করা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কীভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রস্তুত করার দায়িত্ব রয়েছে, যাতে নাগরিকদের তাদের মতামত নির্ধারণ করা সহজ হয়।
তবে কমিশনগুলির সুপারিশ সকলকে গ্রহণ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং এজন্যই জাতীয় ঐক্যমত্য গড়ার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি তিনি সালাম জানান। ন্যায়সঙ্গত সমাজ বিনির্মাণ না করলে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।’ সকলের জন্য সম্পদের এবং সুযোগের সাম্য নিশ্চিত করে এমন একটি অর্থনীতি বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমন একটি রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের পরিচয় অপ্রাসঙ্গিক হবে। আমাদের সকলের একটি পরিচয় – আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমার সকল অধিকার সুনিশ্চিত করতে বাধ্য।’